ঢাকা,বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

অবশেষে পেকুয়া ছাড়ছেন জনস্বাস্থ্য অফিসের সেই দুর্নীতিবাজ কর্মচারী আনিসুল!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন. পেকুয়া ::  অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিস ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন সেই বহুল আলোচিত-সমালোচিত নলকুপ মেকানিক পদের ঘুষখোর ও দুনীতিবাজ কর্মচারী আনিসুল ইসলাম! বদলীর আদেশ পেয়েও গত ১২ দিন ধরে বদলী ঠেকাতে মোটা অংকের টাকার মিশন নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দফতরে দফতরে বিরতিহীন দৌঁডঝাপ করলেও কোন কাজ হয়নি। মোটা টাকার মিশন নিয়ে বদলী ঠেকিয়ে পেকুয়া জনস্বাস্থ্য অফিসে বহাল তবিয়তে কর্মরত থাকার জন্য কোমর বেঁেধ মাঠে নামলেও শেষ পর্যন্ত ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসেই চলে যেতে হচ্ছে সেই দূর্নীতিবাজ ঘুষখোর কর্মচারী আনিসুল ইসলামকে। তার বাড়ি কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ এলাকায়। বিগত ২০১১ সালে পেকুয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসে নলকুপ মেকানিক পদে যোগদান করেন। জালিয়াতি ও ফক্সী পরীক্ষার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে নিয়োগ পেয়েছেন বলে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে। তবে জালিয়াতি ও ফক্সীর মাধ্যমে আনিসুলের নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি কতটুকু সত্য তা জানা যায়নি। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর আনিসুল ইসলামের নিয়োগকালীন সময় জমা দেওয়া সকল কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে জালিয়াতি ধরা পড়বে বলে মনে করেন তার এলাকার সচেতন মহল।

জানা গেছে, সরকারী কর্মস্থলে তিন বছরের অধিক কর্মরত থাকার পর সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে বদলীর জন্য সরকারের মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের লিখিত নির্দেশনা থাকলেও পেকুয়া জনস্বাস্থ্য অফিসের নলকুপ মেকানিক পদের প্রভাবশালী কর্মচারী আনিসুল ইসলামের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ছিল! সরকারী এ কর্মচারী একটানা একই কর্মস্থলে ১১বছর ধরে পেকুয়া জনস্বাস্থ্য অফিসে বহাল তবিয়তে থেকে বেপরোয়া অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষ বানিজ্যসহ মগনামা ও উজানটিয়্না ইউনিয়নের-পাড়া মহল্লায় গড়ে তোলেছে দালাল আর টাউট বাটপার আর হিঁচকে চোরদের সমন্বয়ে একটি বিশাল অপরাধী সিন্ডিকেট। উক্ত সিন্ডিকেটে রয়েছে, দাগী অপরাধী, দূর্নীতিবাজ, পকেটমার, সিঁদেল চোর, কিছু অসৎ শ্রেণীর জনপ্রতিনিধি, গাজা ব্যবসায়ী, মাদক সেবনকারী, হিঁচকে চোর, জমি কেনা বেচার চিহ্নিত দালালসহ সমাজের নানা শ্রেণীর সংঘবদ্ধ অপরাধী। এ নিয়ে স্থানীয় দৈনিক ইনানীসহ স্থানীয় সংবাদপত্রে সম্প্রতি সময়ে একাধিকবার তথ্যনির্ভর ও বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশিত হলে টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের। গত ১৩ অক্টোবর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের চট্টগ্রাম সার্কেল, কুমিল্লার সুনামধণ্য সততার মূর্ত প্রতীক তত্ত্াবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ জহির উদ্দিন দেওয়ান স্বাক্ষরিত ৫৪৯ নং স্বারকে পেকুয়া জনস্বাস্থ্য অফিসের নলকুপ মেকানিক পদের কর্মচারী আনিসুল ইসলামসহ বিভিন্ন উপজেলার আরো ৫ জনকে জনস্বার্থে ও প্রশাসনিক কারনে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায়সহ বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়। বদলীর ১২ দিন অতিবাহিত হলেও সেই বিতর্কিত ও দূূর্নীতিবাজ কর্মচারী আনিসুল ইসলামসহ অন্যরা বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করেনি। কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে পেকুয়া জনস্বাস্থ্য অফিসে বহাল তবিয়তে থাকার জন্য নানা অপতৎপরতা চালিয়েছে আনিসুল ইসলাম। কিন্তু তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। অবশেষে পেকুয়া জনস্বাস্থ্য অফিস ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে সেই ঘুষখোর কর্মচারী আনিসুল ইসলামকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ২৪ আগস্ট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম সার্কেল, কুমিল্লার তত্তা¡বধায়ক প্রকৌশলী মো: জহির উদ্দিন দেওয়ান এর কার্যালয় ৫৯০ নং স্মারকের এক অফিস আদেশের মাধ্যমে পেকুয়া জনস্বাস্থ্য অফিসের নলকুপ মেকানিকসহ বিভিন্ন উপজেলার আরো ৫ জন মেকানিকের গত ১৩ অক্টোবর যে বদলীর আদেশ করা হয়েছিল তা বহাল রেখে তাদের চলতি মাসের ২৭ অক্টোবর এর মধ্যে বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদান করার জন্য জনস্বার্থে ও প্রশাসনিক কারণে আদেশ জারী করেছেন। অন্যথায় চলতি মাসের ৩০ অক্টোবর আনিসুল ইসলামসহ অন্যান্য উপজেলার ৫ জন মেকানিক পদের কর্মচারী তাৎক্ষনিকভাবে অব্যহতি প্রাপ্ত (স্টান্ড রিলিজ) হবেন মর্মে উক্ত অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা যায়. পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিগত ১১ বছরে ধরে সরকারী টিউবওয়েল বাণিজ্য, সাব ঠিকাদারী, জমির ব্যবসাসহ এমন কোন অপকর্ম নাই যা আনিসুল ইসলাম নিজ কর্মস্থলে সংগঠিত করেনি। চকরিয়ার মোশরাফ হোসেন হৃদয় নামের এক দরিদ্র যুবককে মাষ্টার রোলে পেকুয়া জনস্বাস্থ্য অফিসে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় এক লাখ টাকা। প্রতারণার শিকার ওই যুবক টাকা উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে বিচারের আশায় বর্তমানে পথে পথে ঘূরছে। সম্প্রতি পেকুয়া উপজেলার মগনামা ও উজানটিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন জরুরী ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় মাল্টি সেক্টর শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৮-১০ পরিবারের মধ্যে গভীর নলকুপ স্থাপন প্রকল্প যাচাই-বাচাই না করে টাকার বিনিময়ে উপকারভোগী তালিকাভুক্ত করে অপ্রয়োজনীয় জায়গায় গভীর নলকুপ স্থাপন করার সুযোগ করে দিয়ে সরকারী প্রকল্পকে প্রশ্নবিদ্ধও করেছে আনিসুল ইসলাম। একই প্রকল্পের অধীনে পেকুয়া উপজেলার মগনামা ও উজানটিয়া ইউনিয়নের দরিদ্র পরিবারের মাঝে পাকা টয়লেট স্থাপনের জন্য বাচাইকৃত অসংখ্য উপকারভোগীদের কাছ থেকেও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। টাকা নিয়ে প্রবাসীর পরিবারকেও নিয়মানীতির তোয়াক্কা না করে পাকা টয়লেট বরাদ্দ দিয়েছেন আনিসুল ইসলাম। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গোপনে প্রকাশ্যে সরেজমিনে তদন্ত করলে আনিসুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরো বহু অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের বাইন্যা ঘোনা গ্রামের আলী আহমদ এর পুত্র আজগর আলীকে পেকুয়া জনস্বাস্থ্য অফিস কর্তৃক সম্প্রতি সমেয় অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে কোন প্রকার তদন্ত ও আশপাশে বসবাসরত লোকজনের মতামত গ্রহণ না করে একটি ডিপ টিউবওয়েল বরাদ্দ দেয়। উক্ত বরাদ্দ দেওয়া সরকারি ডিপ টিউবওয়েলটি আজগর আলীর বাড়ীতে স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার পূর্বে সরেজমিনে কোন তদন্ত করা হয়নি। এর নেপথ্যে রয়েছে কর্মচারী আনিসুল।

পেকুয়ার স্থানীয় দুর্নীতি বিরোধী সংগঠন ‘আমরা পেকুয়াবাসীর’ মহাসচিব মাহমুদুল করিম জানান, পেকুয়া জনস্বাস্থ্য অফিসের কর্মচারী আনিসুল ইসলাম ঘুষ বানিজ্যে এতোই বেপরোয়া যে অফিসের কর্মকর্তার কথাও পর্যন্ত শুনেনা। কর্মস্থলে চাকুরী করাকালীন এতো টাকা দিয়ে কিভাবে জমি কিনে? টাকার উৎস্য কোথায় এসব বের করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

কর্মস্থলে নানা অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্যে’র বিষয়ে জানতে পেকুয়া জনস্বাস্থ্য অফিসের নলকুপ মেকানিক আনিসুল ইসলামের বক্তব্য জানার জন্য তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকার ফোন করা হলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য সংযোজন করা সম্ভব হয়নি। তবে পরে উক্ত কর্মচারীর বক্তব্য পাওয়া গেলে গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করা হবে।

পাঠকের মতামত: